গল্প || হারাধনের ভূতের গপ্পো || শ্যামল চক্রবর্ত্তী

 হারাধনের ভূতের গপ্পো


        

                    


হারাধন: বলো কাকা, এই যে মাঠের পেছনে কালীবাড়ি, পেছনদিকে সেন বাবুর বাগানে, ওখানে একটি পুকুর আছে। পুকুরটা খিরকির পুকুর। আমার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে অনেক বাজি লড়েছিল। রাত্রিবেলা এই ঘুটঘুটে অন্ধকার ওখানে একটা জাম গাছ আছে। ওই জাম গাছ থেকে যদি চারটে পাতা আনতে পারো তাহলে তোমাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেব। কেউই বাজি ধরতে রাজি হয়নি।

বলছে ওরে বাবা এই ঘুটঘুটে অন্ধকার আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।

আমি বললাম আমাকে টাকা দিবি বল। আমি তোকে দেখিয়ে দিচ্ছি।

নেদো: আচ্ছা তুমি ছোটবেলায় এখানে মানুষ তুমি খুব সাহসী তুমি তো পারবে।

কাকা: অন্ধকারে ভুত সবাই ভয় পায়।ভূত একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ অতীত বা সত্তা।ভারতবর্ষে ভূত বিশ্বাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের মনে গভিরভাবে বদ্ধমূল হয়ে আছে। ভূতের বিবিধ ধারণার মূলে রয়েছে হিন্দু পুরাকথার সুবিশাল ক্ষেত্র ও এর ধর্মীয় গ্রন্থাবলী, সাহিত্য ও লোককথা। ভারতে উপমহাদেশে অনেক অভিযুক্ত ভুতুড়ে স্থান রয়েছে যেমন, শশ্মান (কিংবা কবরস্থান), ভাঙ্গা দালানকোঠা, জমিদারবাড়ি বা রাজবাড়ি, দুর্গ, জঙ্গলের মাঝে বাংলাবাড়ি, চিতা দহনের ঘাট, ইত্যাদি।

নেদো: বাঙালী সংস্কৃতিতেও ভূত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে বলো। ভূত ও বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত সত্তা গ্রামবাংলার সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কাকা: রূপকথায় প্রায়ই ভূতের ধারণা ব্যবহার হয়ে থাকে এবং আধুনিককালের বাংলা সাহিত্য, চলচ্চিত্র, বেতার ও টেলিভিশন প্রোগ্রামে ভূতের উপস্থিতি যথেষ্ট পাওয়া যায়।হিন্দুধর্মে প্রেত একটি বাস্তব সত্তা। আমি অত ভয় পাই পাই না ।

প্রেত একটি রূপ-আকৃতি - একটি শরীর যা শুধু বায়ূ ও আকাশের সমন্বয়ে গঠিত। হিন্দু ধর্মমতে সাধারণ পার্থিব শরীর এ দুটি ছাড়াও আরও তিনটি পদার্থ জল, অগ্নি ও পৃথ্বী বা মাটি দিয়ে সৃষ্ট। বিশ্বাস করা হয় পূর্বজীবনের কর্মফল অনুযায়ী এরকম আরও অনেক শরীর আছে ।একটি থেকে তিনটি পদার্থের অনুপস্থিতিতে ঔ‌ জিবাত্মা পুনর্জন্মগ্রহণ করে। একটি আত্মা পুনর্জন্ম ও পুনর্মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ। অনিত্য রূপে আত্মা শুদ্ধ এবং এর অস্তিত্ব দেবতুল্য তবে তা কায়িক জন্মের শেষরূপে। এই পদার্থের অনুপস্থিতির কারণেই প্রেতরা কিছুই হজম করতে পারে না আর তাই ক্ষুধার্ত রয়ে যায়। প্রেতরা মানুষের কাছে অদৃশ্য যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে নির্দিষ্ট কিছু মানসিক অবস্থায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। তারা অনেকটা মানুষের মত দেখতে তবে সঙ্কুচিত ত্বক, সরু অঙ্গ, অতিশয় ফোলা পেট ও লম্বা গলা বিশিষ্ট। প্রেতরা স্বভাবতই আবর্জনাময় ও পরিত্যাক্ত স্থানে বাস করে এবং নিজেদের পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী বিবিধ অবস্থায় থাকে। ক্ষুধার সাথে সাথে অসহনীয় উষ্ণতা ও শীতের পীড়াভোগ করে।

নেদো: কাকা ,পেত্নী হলো নারী ভূত যারা বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল , অবিবাহিতভাবে মৃত্যু হয়েছে তারাই তাই না? পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেত্নী শব্দ থেকে এসেছে (পুরুষবাচক শব্দ প্রেত)। এসব ভূত সাধারনত যে কোন আকৃতি ধারণ করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে? এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকে। মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে।

কাকা : পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। পেত্নীদের আকৃতিতে একটিই সমস্যা রয়েছে, তা হলো তাদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো।তাদেরকে চেনার একটিই উপায় আছে এবং সেটা হলো তাদের পা দেখে।যদিও এরা সাধারণ নারীর বেশ ধরে থাকতে পারে কিন্তু তারপরও তাদের পা গুলো পেছনের দিকে ঘোরানো থাকে অর্থাৎ মানুষের বেশ ধরে থাকা অবস্থাতেও তাদের পায়ের আঙুলগুলো পেছনের দিকে এবং পায়ের পাতা সামনের দিকে ঘোরানো থাকে।

নেদো: কাকা যা বলছ শুনলেই ভয় লাগে। শাকচুন্নির সম্বন্ধে কিছু বল।

কাকা:শাকচুন্নি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ শঙ্খচূর্ণী থেকে এসেছে। এটা হলো বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্গালি শুভ্র পোশাক পরিধান করে এবং হাতে শঙ্খ বা শাঁখাপরিধান করে। শাঁখা হলো বাঙ্গালি বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের প্রতীক। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে বা আক্রমণ করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকগাঁথা অনুসারে তারা শেওড়া গাছে বসবাস করে।

নেদো: আচ্ছা আমি একটা বইতে পড়েছি কাকা,

চোরাচুন্নি অত্যন্ত দুষ্ট ভূত। এরা মানুষের অনিষ্ট করে থাকে। সাধারনত কোন চোর মৃত্যুবরণ করলে চোরাচুন্নিতে পরিনত হয়। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে গঙ্গাজলের ( গঙ্গা জলকে পবিত্র) জল ব্যবস্থা করা হয়।

তাছাড়া এ ধরনের ভূত সচরাচর দেখা যায় না। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়া ধরে শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারনত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে ও এরা শিকারের মাংস ছিড়ে ছিড়ে খায়।

বুড়ো: কাকা, তোমরা কি গল্প করছো ?

কাকা: নেদো ভূতের গল্প শুনতে চাইছে সত্যি ভূতের গল্প আমাদের বাড়ির সামনে যে খ্যাতির পুকুর আছে বিভিন্ন ভূত সম্বন্ধে আলোচনা করছি।

বুড়ো: তুমি মেছো ভূতের নাম শুনেছো। এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।' দেও ' 1 ধরনের ভূত পুকুর-ডোবা,নদী এবং বিভিন্ন জলাশয়ে বসবাস করে। এরা লোকজনকে জলে ফেলে ডুবিয়ে মারে বলে বিশ্বাস করা হয়। জলাশয়ে স্নান করতে আসা মানুষদের একা পেলে এরা নিচ থেকে তাদের পা টেনে ধরে পানির গভীরে নিয়ে যায়।এতে করে সেই ব্যক্তি শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।

কাকা :নিশি ভূতদের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর হলো নিশি। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে শিকারকে তার প্রিয় মানুষের কন্ঠে নাম ধরে ডাকে এবং বাইরে বের করে নিয়ে যায়। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে আসে না। মনে করা হয় তারা নিজেরাও নিশিতে পরিনত হয়। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে। লোককাহিনী অনুসারে নিশিরা কোন মানুষকে দুবারের বেশি ডাকতে পারে না। তাই কারো উচিত রাতে কেউ তিনবার ডাকলেই ঘর থেকে বের হওয়া এতে করে নিশির আক্রমণের ভয় থাকে না।

বাবু : কাকা তোমারি ছোট ভাইপো নেদো, ও ভুতের ভীষণ ভয় পায়। তুমি ওকে ভূতের গল্প শোনাচ্ছো।

নেদো: কাকা আমিতো ভয় পাই তোমার বড় ভাই ভূষণ ভূতের ভয় পায়। আমার কথা বলছো তো।

তুমি আরেকটা ভূতের কথা বলিস না। মামদোভুত ।হিন্দু বিশ্বাস মতে, এক বিশেষ সম্প্রদায় ব্যক্তিদের আত্মা। এদের শরীরের গঠন অনেকটা শুক্রাণুর মতো অর্থাৎ এদের কোমরের নিচ থেকে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে গেছে। এদের কোন পা নেই এবং এরা বাতাসে ভেসে থাকে।এদের কারোর মাথায় টুপি এবং লম্বা লম্বা দাড়ি দেখতে পাওয়া যায়।এরা সাধারণত কবরস্থানের আশে-পাশে থাকা বড় ও ঘন গাছ-পালায় বসবাস করে এবং সেখান দিয়ে কেউ গেলে এরা তাদের বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখায় বলে লোককথা প্রচলিত রয়েছে।

বাবু : আরেকটা ভূতের কথা বলে না কাকা গেছোভূত। গেছো ভূত গাছে বসবাস করে। গেছো শব্দটি গাছ (বৃক্ষ) শব্দ থেকে এসেছে।লোকগাঁথা অনুসারে যেসব মানুষ গাছের ডালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে তাদের আত্মা সেই গাছের মধ্যেই থেকে যায় এবং গেছো ভূতে পরিণত হয়।তবে তারা বিভিন্ন গাছেই বসবাস করে থাকে।বড় ও ঝোপালো গাছপালা এদের প্রিয় আশ্রয়স্থল।এরা বিভিন্ন ভাবে মানুষকে ভয় দেখায়।এদের মধ্যে অতি প্রচলিত ধরণটি হচ্ছে, রাতে যখন কোন ব্যক্তি একা পথ দিয়ে হেটে যায় তখন এরা গাছে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে থাকে ফলে সেই ব্যক্তিটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।কারো কারো অভিমত অনুসারে এদের শরীরের গঠন অনেকটা বানরের মতো এবং এরা তালগাছে থাকে। এরা তালগাছ থেকে এমন ভাবে নিচে নেমে আসে যেমন করে টিকটিকি দেওয়ালে চলাফেরা করে অর্থাৎ মাথা নিচের দিকে ও পা উপরের দিকে রেখে গাছ বেয়ে নেমে আসে।

কাকা: আর একটা ভয়ঙ্কর ভূত ব্রহ্মদৈত্য।সবচেয়ে জনপ্রিয় সাধারনত কারো ক্ষতি করে না। এ ধরনের ভূতরা হলো ব্রাহ্মণের ভূত। সাধারনত এরা ধূতি ও পৈতা পরিহিত অবস্থায় বিচরণ করে। এদেরকে পবিত্র ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা অত্যন্ত দয়ালু ও মানুষকে অনেক উপকার করে থাকে।

কাকা : এবার একটা ভূতের গল্প করবো সেটা আলেয়া

একদিন রাত দুটোর সময় আমাদের কাঞ্চন তলা থেকে হেঁটে হেঁটে আসছি। আর ঐ চটকার পোল । যেখানে প্রচুর গরু-মোষ থাকে ওইখানে খাটাল। প্রচুর গোবর আছে । দপ দপ দপ আগুন জ্বলছে।

নিশুতি রাত কেউ নেই অন্ধকার ঘুরঘুর করছে। আমার তো ভয় ডর নেই। আমি এগিয়ে গিয়ে ওর ধরতে যাচ্ছি আর দেখছি আবার এগিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সচরাচর অন্ধকারে জলাভূমিতে বা খোলা প্রান্তরে আলেয়া দেখা যায়। মাটি হতে একটু উঁচুতে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। আবার ধরতে যাচ্ছি আবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । এগুলোকে আলিয়া ভূত বলে ।

তবে লোককথায় একে ভৌতিক আখ্যা দেওয়া হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করে গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে আলেয়া এর উৎপত্তি। সুতরাং বুঝতে পারছিস আলিয়া ভূত কি ।

নেদে: তুমি কাকা যাই বলো অন্ধকারে ঘুটঘুটে, বিজ্ঞান টিজ্ঞান যাই বলো । লোকে আঁতকে উঠবে। ফলে জেলেরা ভুল বুঝে সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুবরণ করে। শুনেছি নাকি বাচ্চা একদম কচি বাচ্চারা মারা গেলে নাকি হয়।

বাবু: বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হলে বেঘোভূত হয়, করা হয়। সাধারনত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত কারণ বাঘের অভাশ্রম হলো সুন্দরবন। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে আসা গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের সন্নিকটে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে ডাকে।

কাকা :কন্ধকাটা ভূতেরা মাথাবিহীন হয়ে থাকে। সচরাচর এরা হলো সেইসব লোকের আত্মা যাদের মৃত্যুর সময় মাথা কেটে গেছে যেমন, রেল দুর্ঘটনা বা অন্য কোন দুর্ঘটনা। এ শ্রেণীর ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং অন্য মানুষকে আক্রমণ করে তাদের দাসে পরিণত করে ও তার মাথা খুঁজার কাজে নিয়োগ করে।

আমার একটা পরিচিত ভুতের কথা বলছি- কানাভুলো এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘোরপাক খেতে থাকে। ভূতরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌচ্ছার পর তার শিকারকে মেরে ফেলে। এক্ষেত্রে শিকার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এধরনের ভূতদের রাতে গ্রামের মাঠের ধারে পথের মধ্যে দেখা যায়। শিকার সবসময় একাকী থাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তোর বাবার বাড়ি শিকার হয়েছিল এই গল্প ও তোকে আমি।

নেদো: আরেকটা ভূতের কথা বললে না কাকা, ডাইনি ভূত। ডাইনী মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারনত বৃদ্ধ মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ডাইনি বলা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের হাড়, মাংস ও রক্ত খেয়ে বহু বছর বেঁচে থাকে।

বাবু: কাকা ভাই আর একটা ভূতের নাম শুনলে পিলে চমকে যাবে। ডাইনি বুড়িদের ।অনুগতশ্রেণির ভূত। পাতিহাঁস খেতে খুব ভালোবাসে এরা। থাকে পুকুর বা দিঘীর ধারে কোনো তাল বা নারিকেল গাছে। রাতদুপুরে মেয়েলোকের বেশে ঘুরে বেড়ানো এদের অন্যতম অভ্যাস।

নেদো :কাকা এত একটা ভূতের সম্বন্ধে বলে এবার আসল গল্পে আসো।

কাকা: তোকে যেটা বলছিলাম খিরখির পুকুরের গল্পটা। অন্ধকারে বন্ধুদের সঙ্গে আমার বাজি হয়েছে তো। ভুলে কোন টর্চ ,লাইট, কোন লোহা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। যাই হোক আমি তো সাড়ে বারোটা নাগাদ আমি একা একা গেলাম ওখানে। ওখানে যে জাম গাছটা আছে। দূরে দেখি। একটা বুড়ি , পেত্নী ভুতের কথা বললাম। আগেই বলেছি। দেখি মাথায় পুরো ঘোমটা দেওয়া। সাদা রঙের শাড়ি লাল পাড়। দেখি পা দোলাচ্ছে জাম গাছে। আমি এত সাহসী, আমার গাটা ছমছম করছিল। আরো এগিয়ে গেছি কি আবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। গোড়ালি দুটোও উল্টানো। আমার মত লোক এত সাহসী আমি পর্যন্ত ভয় পেয়ে গেছি।


ভুত ভুত ভুত ভেতরটা আমার হারিম হলো।

টক ঠক করে কাঁপছিলাম সাহস আমার কোথায়।

তোরা হলে আঁতকে মরবি, ঘুটঘুটে অন্ধকারে।

নিদো তোকে কি বলবো, ভূত আছে না নেই।

অনুভূতি অন্ধকারে মিলবে এক শিহরণ ভীতি।


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024