গোবিন্দ মোদকের দুটি কবিতা

 দুলেপাড়ার দুগ্গারা (১)


জলভরা মেঘ বিদায় নিতেই 

শরতের জানান দিয়ে নদীর ধারে 

                    ইতি-উতি উঁকি দেয় কাশফুল।

শিউলির কাণ্ড-শাখা-প্রশাখা জুড়ে তখন 

                    তুমুল ব্যস্ততা। 

ফুল ফোটাতে হবে যে !

ওদের ব্যস্ততাকে সম্মান জানিয়ে

দুয়ারে এসে দাঁড়ায় শরৎ-বেলা।

রোদ্দুরে লাগে সোনারঙের ছোঁয়া।

চোখের আরাম আনে আশমানি আকাশ। 

পরিযায়ী মেঘের দল ভেলা চড়ে আকাশ ভ্রমণে। 

মা-দুগ্গা আসছেন যে !

ঘরে ঘরে মা-জননীদের তাই কতো প্রস্তুতি ! 


কিন্তু দুলেপাড়ার দুগ্গাদের জীবনে 

                      কোনও শরৎ থাকতে নেই।

ওদের দু'বেলা বাবুর-বাড়ির কাজ থাকে। 

লাঞ্ছনা থাকে। অপবাদ থাকে। 

লোভী কামার্ত চোখের কুৎসিত ইঙ্গিত থাকে। 

ওদের জীর্ণ পোশাকের ধারে-কাছেও 

শরৎ আসতে পারে না। 

তবুও ওদের কানে আসে ঢাকের আওয়াজ, 

পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ। 

কিন্তু বাসন-মাজার শব্দের আড়ালে 

ঢাকা পড়ে যায় আবাহনের বাজনা।

___________________________________


দুলেপাড়ার দুগ্গারা (২)


দুলেপাড়ার দুগ্গাটা নাকি মরেছে !

গলার দড়িটা বা ওর পরনের আধময়লা শাড়িটা 

মৃত্যুর কারণ জানাতে পারে না।

তাই বাবুদের বাড়ি গতর খাটানো মেয়েটার 

গতরের ময়নাতদন্ত হয়। 

ইস ! পেটে নাকি বাচ্চা ছিল পাঁচমাসের !

সব্বোনাশ ! বলে কি !

ঢেউ জাগে দুলেপাড়া জুড়ে। 

সে আগুনের আঁচ ছড়ায় বাবুদের পাড়াতেও। 

তারপর সবই নিয়মমাফিক চলে।

বাবুদের বাড়ি থেকে একথলে টাকা 

এসে পড়ে দুগ্গাদের ভাঙা টালির চালে,

দুগ্গার বাবার পুরোনো লুঙ্গিতে, 

আর আবাগীর মায়ের হাতের লোহা-পলায়। 

সব ঢেউ ক্রমে নিস্তরঙ্গ হয়ে যায়।

যেন কোথাও কোনও কিছুই ঘটেনি।

দুলেপাড়ার আর এক দুগ্গা নাকি 

এখন বাবুদের বাড়িতে কাজে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩১ || Sarod sonkha 1431 || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র