গোবিন্দ ব্যানার্জীর একটি গল্প

 ডরো মৎ


গল্পটা আমার মস্তিষ্কজাত নয়। মস্তিষ্ক আধারিত। শোনা গল্পের ভান্ডার থেকে অণুকথন বলা চলে। অবশ্য এ যাবৎ যা লিখেছি, 

সবই তাই। ছেঁড়া পেঁজা জায়গাগুলো কেবল আঠা

দিয়ে জুড়ে নিয়েছি। কত কত গল্প। কত চরিত্র।

ঠাসা হয়ে আছে দেরাজ। পাল্লা খুললেই ম-ম করে

পুরোনো গন্ধে। গত ভাদ্রের রোদ্দুরে কিছু গল্প

মড়মড়ে ক'রে শুকিয়ে নিতে গিয়ে চরিত্রগুলো এমন গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে গেল... দু'চারটেকে কোনোরকমে 

মিলিয়ে জুলিয়ে এ গল্পটা খাড়া করেছি... সযত্নে রেখে দিয়েছি নতুন গল্পের সংরক্ষিত দেরাজে...

              গোমুখের পথে কয়েক কিলোমিটার হাঁটার

পর, দলটার দুরন্ত পা'গুলো বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

তিন-চার পরত গরম পোশাক পরে থাকলেও বাতাসের তুষার শীতল ছোঁয়া হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সামনেই একটা বড় ধ্বস। উপর থেকে পাহাড়ের মাথাটা খসে পড়েছে।

ওটা পেরোতে হবে ভাবলেই সবার বুক অসহায় হয়ে 

উঠছে। পিসেমশাই তখন তাজা যুবক। দলপতি।

তিনি ধ্বসটা পার হবার সম্ভাব্য নানা ছক কাটছেন

কাগজে। সবাই প্রবল আশায় চেয়ে আছেন তার

মুখের দিকে...

             হঠাৎ উল্টো দিক থেকে সেই ভীষণ ভাঙনটা

অনায়াসে পেরিয়ে আসছেন এক নেংটি সর্বস্ব সাধুবাবা। সারা শরীরে, মুখে, মাথায় ছাইভষ্ম মাখা।

খালি পা। বয়েস বোঝার উপায় নেই। পিসেমশাই

সহ পুরো দলটা গোগ্রাসে দেখছেন সেই দৃশ্য। এসে

পড়েছেন কাছে। সারা মুখে নির্মল হাসি ছড়িয়ে সাধুবাবা একটু দূরের একটা পাথরে বসলেন। পিসেমশাইয়ের হাতের কাগজে আঁকিবুকি কাটা থেমে গেছে। চারিদিক স্তব্ধ। সাধুবাবা হো হো ক'রে

হেসে উঠলেন... ডরো মৎ... দিলসে চলো... বোলো..

গঙ্গা মাঈকী ... জয়....

আপ্লুত দলটার সম্মোহিত মুখে... জয়...জয়... ধ্বনি

পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হতে হতে ছড়িয়ে গেল...

জয়...জয়য়... ভয়য়... হয়য়....


বিশেষ জ্ঞাতার্থে...

               আপনারা বিশ্বাস করুন বা না করুন... ট্রেক দলটা কিন্তু পেরিয়ে গিয়েছিল সেই ভীষণ ধ্বসটা। ডরো মৎ... আওড়াতে আওড়াতে। এবং আরো খানিকটা হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিল বিখ্যাত ভূর্জ গাছের জঙ্গলটার কাছে। আর সেখানেই ঘটেছিল সেই তোতা পাখির ব্যাপারটা। পাখিটা তাইই বলত... যা তাকে শোনানো হ'ত। অবিকল... 

আসল গল্পটা সম্ভবতঃ এখান থেকেই শুরু। স্মৃতির পাতা মুড়ে থাকতে থাকতে এই অংশটুকু মনে হয় ছিঁড়ে গিয়েছিল... অথবা হারিয়ে গিয়েছিল ভাদ্রের ঠা ঠা রোদ্দুরে...


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024