অর্ণব মিত্রের একটি গল্প

 স্যানাল বাড়ি



সান্যাল বাড়ির মেজ বউ রাজিতা। সান্যাল বাড়ির ভেঙ্গে পড়া আভিজাত্যকে জুড়তে জুড়তে আজ বড় ক্লান্ত ও। তিন পুরুষ ধরে সান্যাল বাড়িতে লেখালেখির চল। রাজিতার দাদাশ্বশুর ছিলেন বিরাট লেখক,নাম পিনাকী সান্যাল। রাজিতার পরিচয় পিনাকী বাবুর মেজ নাতির স্ত্রী। এই বাড়ির সকলেই লেখক। এখানে প্রতিদিন সাহিত্য, সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষজনের আনাগোনা।


তবে সান্যাল বাড়ির মানসম্মান হঠাৎ করেই ভেঙ্গে পড়েছে। লেখার মান একেবারে নেমে গেছে রাজিতার স্বামী দেবার্ঘ্যর । বাড়ির সবাই রাজিতা কে নিয়ে এই নিয়ে দোষারোপ করত। নাকি রাজিতার উষ্কানীতে এসব হয়েছে। রাজিতার মন্ত্রণায় ওদের বাড়ির বাজারটুকুই হয়না। যাই হোক মেজো ছেলের উপন্যাস নিয়ে বাড়িতে একেবারে সাজো সাজো রব পরে গিয়েছে।


নতুন উপন্যাস রাজিতার মত এক সংসারে উপেক্ষিত নারীর, যে হঠাৎ খুঁজে পায় যে তার গুণ ইচ্ছা করে বাড়ির লোকজন চাপা রেখেছিল।


আনমনে কি যেন ভাবছিল রাজিতা । হুকুম আসে উপন্যাসের সেট নিয়ে আসার জন্য। রাজিতা বই এর পাহাড় থেকে বই নামাতে গিয়ে চোখে পড়ে একটা চেনা নামের বই 'উপেক্ষিত' ।


বইটা হাতে নিয়ে রাজিতার বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। বইয়ের প্রচ্ছদে রাজিতার

নাম। লেখিকা রাজিতার এখনও মৃত্যু হয়নি। বিশ বছর আগের লেখা এখনও জীবিত?


রাজিতা বিয়ের আগে খুব লেখালিখি করত। দু একটা কবিতা পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। রাজিতা আর দেবার্ঘ্যর লেখালিখির সূত্রে আলাপ। বিয়ের পর রাজিতার লেখা বন্ধ হয়ে যায়, বলা ভালো বন্ধ করে দেওয়া হয় । তাও জীবনের প্রথম আর শেষ উপন্যাস লিখেছিল রাজিতা । সেটার পাণ্ডুলিপি নিজেই প্রকাশনা সংস্থার কাছে দিয়ে এসেছিল ও কোনোদিনও ও আশা করে নি যে তা ছাপা হবে ।


বইটা নিয়ে ও স্বামীর কাছে গেল।


- এটা কি?

- আরে সেটাই তো আমার প্রশ্ন.. দাও দেখি


দেবার্ঘ্য বই টা দেখে অবাক হয়ে গেল। প্রশ্ন করে-


-এই বই তোমার কাছে কি করছে? তোমার সবেতে এত

কৌতুহল কেন?


- আমার প্রশ্নের উত্তর দাও


- ...উত্তর দাও মানে? এই বই তুমি আমাদের থেকে লুকিয়ে ছাপতে গিয়েছিলে.. দু কলম লিখে নিজেকে লেখিকা মনে করে সেটা ছাপাতেও দিয়ে দিলে! লেখার তুমি কি বোঝ ? তোমার লেখা পরে আমার কলিগরা বলেছিল তোমার হাতে নাকি আমার দাদুর মুন্সিয়ানা আছে, সান্যাল বাড়ির পুরুষদের থেকে কখনও একটা পরের বাড়ির মেয়ে বেশি নাম করতে পারে না! তাই এসব লুকিয়ে রাখা। হয়েছে শান্তি। এবার যাও। "


নিজের কাছের মানুষদের আরও বেশি অপরিচিত মনে হল রাজিতার। সভ্যতা এগিয়েছে, পাল্টেছে সান্যাল বাড়ির লেখার ধরণ। তাও রাজিতার পরিচয় শুধুই সান্যাল বাড়ির মেজ বউ নাকি হারিয়ে যাওয়া এক লেখিকা যাকে আর লিখতে দেওয়া হয়নি।



এরা ভদ্রলোক? রাজিতা ভুলে যাচ্ছে কে মানুষ আর কে অমানুষ।


এখনও থরথর করে কাঁপছে রাজিতা ।


Comments

Popular posts from this blog

শারদীয়া সংখ্যা ১৪৩০ || সম্পাদকীয় ও সূচিপত্র || World Sahitya Adda Sarod sonkha 1430

TATA Steel Job Recruitment 2024 || টাটা স্টিল কোম্পানিতে নতুন করে 6000 শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ || TATA company job

মাধ্যমিক পাশেই ভালো মাইনের চাকরি,জলের ট্যাঙ্কি দেখাশোনার স্থায়ী কাজ || Jal Jeevan Mission Registration 2024